প্রবাসে কাজ করে উপার্জন করা কঠোর পরিশ্রমের ফল, তাই বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় ভুল পরিকল্পনা বা তাড়াহুড়োর কারণে বাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে। এই প্রবন্ধে প্রবাসীরা বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
১. বাড়ি করার সঠিক সময় কখন?
প্রবাসীদের প্রথমেই বুঝতে হবে কখন বাড়ি নির্মাণ করা উচিত।
(ক) প্রথম অবস্থায় বাড়ি করা ঠিক নয় যদি:
- আপনি প্রবাসে নতুন এবং আর্থিকভাবে স্থিতিশীল নন।
- এখনো বড় কোনো সঞ্চয় নেই।
- দেশে স্থায়ীভাবে ফেরার কোনো পরিকল্পনা করেননি।
(খ) বাড়ি করার সঠিক সময়:
- যখন পর্যাপ্ত সঞ্চয় হয়েছে।
- দেশে পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা প্রয়োজন।
- দেশে ফিরে ব্যবসা বা অন্য কিছু শুরু করার পরিকল্পনা করছেন।
২. বাড়ি করার আগে পরিকল্পনা
প্রবাসে উপার্জিত অর্থের বড় অংশ বাড়ি নির্মাণে খরচ করার পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখুন:
(ক) বাজেট নির্ধারণ:
- জমি কেনা এবং বাড়ি তৈরির মোট খরচ হিসাব করুন।
- অনাকাঙ্ক্ষিত অতিরিক্ত খরচের জন্য ২০-২৫% অতিরিক্ত বাজেট রাখুন।
(খ) উপযুক্ত স্থান নির্বাচন:
- পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী জমির অবস্থান নির্ধারণ করুন।
- স্কুল, বাজার, হাসপাতাল ইত্যাদির নিকটবর্তী স্থান বেছে নেওয়া ভালো।
- সঠিক প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও বিবেচনা করুন।
(গ) বাড়ির ডিজাইন:
- বাড়ির নকশা তৈরির আগে আপনার চাহিদা ও পরিবারের আকার বিবেচনা করুন।
- ভবিষ্যতে বাড়ি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রাখুন।
- একজন পেশাদার স্থপতির সহায়তা নিন।
৩. বাড়ি নির্মাণে সাধারণ ভুল
বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে নিম্ন লিখিত ভুল গুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
(ক) তাড়াহুড়ো করা:
বাড়ি তৈরির জন্য তাড়াহুড়ো করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে যেতে পারে। সময় নিয়ে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করুন।
(খ) বিশ্বস্ত লোকের উপর ভরসা না করা:
প্রবাসে থাকার কারণে পুরো কাজ বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। একজন সৎ প্রকৌশলী বা নির্মাণ ঠিকাদার নিয়োগ করুন।
(গ) খরচ কমানোর চেষ্টায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা:
নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এধরণের কাজ এড়িয়ে চলুন।
৪. বাড়ি করার আগে প্রয়োজনীয় বিষয়
বাড়ি নির্মাণের পূর্বে নিম্ন লিখিত বিষয় গুলো ভালোভাবে যাচাই করুন।
(ক) জমি কেনার সময়:
- জমির দলিল ও খতিয়ান পরীক্ষা করুন।
- জমি কিনতে আইনজীবীর সহায়তা নিন।
- জমির মালিকানার কোনো সমস্যা আছে কিনা যাচাই করুন।
(খ) বাড়ি তৈরির আইনি অনুমোদন:
- স্থানীয় পৌরসভা বা ইউনিয়ন থেকে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি নিন।
- নকশা অনুমোদনের জন্য সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন।
৫. প্রবাসে থেকে কিভাবে কাজ তদারকি করবেন?
বাড়ি তৈরির সময় প্রবাসে থেকে কাজের উপর নজর রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়:
(ক) বিশ্বস্ত আত্মীয় বা বন্ধু নিয়োগ করুন:
- প্রতিদিনের কাজ তদারকির জন্য একজন বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ করুন।
(খ) অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করুন:
- ভিডিও কলের মাধ্যমে ঠিকাদার বা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিয়মিত ছবি বা ভিডিও সংগ্রহ করুন।
(গ) পেশাদার ঠিকাদার নিয়োগ করুন:
সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য একজন পেশাদার সৎ ঠিকাদার নিয়োগ দিন।
৬. বাড়ি তৈরির পরবর্তী পরিকল্পনা
বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে তা কীভাবে ব্যবহার করবেন তা পরিকল্পনা করুন।
- আপনি নিজে থাকবেন, নাকি ভাড়া দেবেন?
- রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি তহবিল তৈরি করুন।
৭. উপসংহার:
প্রবাস থেকে উপার্জিত অর্থ বাড়ি তৈরিতে বিনিয়োগ করার আগে সঠিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য ধরে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করুন। এতে শুধু আর্থিক সুরক্ষা নয়, মানসিক শান্তিও বজায় থাকবে।
আপনার বাড়ি যদি গ্রাম অঞ্চলে হয় তাহলে শুধুমাত্র থাকার জন্য ছোট্ট করে বাড়ি বানান এবং বাদবাকি টাকা দিয়ে অন্যত্র জমি কিনে রেখে দিন একটা কথা মাথায় রাখবেন জমির দাম খুব দ্রুত বাড়ে কিন্তু একবার বাড়িতে সব টাকা খরচ করে ফেললে সেই বাড়ির দাম কিন্তু জমির তুলনায় ততটা বাড়বে না।
তাই আপনার থাকার জন্য যতটুকু পারি দরকার গ্রামাঞ্চলে হলে ঠিক ততটুকুই করবেন গ্রামাঞ্চলে অনেক বড় বাড়ি বানালে অনেক টাকা ব্যয় করে তাহলে ভাড়া দিতে পারবেন না।
যদি ভারাই না দিতে পারেন তাহলে বাড়িতে এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে লাভ কি। থাকার জন্য বাড়ি করা হয়ে গেলে গরুর ফার্ম করুন মুরগির ফার্ম করুন প্রয়োজনে অনলাইনে ইউটিউবে এগুলোর ভিডিও দেখে আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।